বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

13319705_887717598005898_3066462706435228240_n

বাংলাদেশের ৭ টি বিভাগের ৬৪ টি জেলার নামকরণের ইতিহাস সংক্ষেপে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হল।
১. বরিশাল বিভাগ ২. চট্টগ্রাম ৩. ঢাকা ৪. খূলনা বিভাগ ৫. রাজশাহী বিভাগ ৬. রংপুর ভিভাগ ও ৭. সিলেট বিভাগ।

১। বরিশাল বিভাগঃ-
বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠী, পটুয়াখালি, পিরোজপুর ও ভোলা এই ৬ জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ গঠিত হয়। অবশেষে ২০০০ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১. বরগুনা জেলাঃ-
বরগুনা নামের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে কাঠ নিতে এস খরস্রোতা
খাকদোন নদী অতিক্রম করতে গিয়ে অনুকুল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য এখানে অপেক্ষা করত বলে এ স্থানের নাম হয় বড় গোনা।কারো মতে আবার স্রোতের বিপরীতে গুন (দড়ি) টেনে নৌকা অতিক্রম করতে হতো বলে এ স্থানের নাম বরগুনা। কেউ কেউ বলেন, বরগুনা নামক কোন প্রভাবশালী রাখাইন অধিবাসীর নামানুসারে বরগুনা। আবার কারো মতে বরগুনা নামক কোন এক বাওয়ালীর নামানুসারে এ স্থানের নাম করণ করা হয় বরগুনা।

২. বরিশাল জেলাঃ-
বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকা নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। অথাৎ বরি (বড়)+ সল্ট(লবণ)= বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো । পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।

কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন ছিল যেকোনো সময় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি দেবেন ডা. জাফরুল্লাহ। অবশেষে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে, খোলা চিঠি-২' শিরোনামে চিঠিটি পাঠালেন জাফরুল্লাহ। সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও নানা সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। এতে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিচয়, বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ঘোষিত কমিটি, সরকারবিরোধী আন্দোলন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, নানা পরামর্শসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ই-মেইলে এই চিঠিটি পাঠানো হয়। পাঠকের জন্য জাফরুল্লাহর পুরো চিঠিটি তুলে ধরা হলো- ভাল কাজ করেছেন: দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৫ আগস্ট আপনার জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বাতিল করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী মন্তব্য করেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি জিতেছেন। একই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু শিশুর জন্ম হবে। কিছু মানুষের মৃত্যু হবে, কতক বিয়ে হবে, তালাক হবে, এমনকি শিশুর আকিকা ও হবে। তবে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্টের ভিন্ন গুরুত্ব আছে। এদিন দেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান দুই কন্যা ছাড়া তার পরিবারের অন্য সকলে নিহত হয়েছিলেন। এটা শোকের দিন। এদিনে জন্ম দিবস পালন না করাটা অবশ্যই ভাল কাজ। খালেদা জিয়াকে ১৯৭২ সনে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম যে দিন দেখি তখন তার চেহারায় বুদ্ধির দীপ্তি দেখিনি। কর্নেল জিয়াউর রহমান তার পরিবারের সাথে পরিচয় করার জন্যে আমাকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের ৬নং বাংলোতে বৈকালিক চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন। স্টাফ রোডের ১ম বাড়িতে থাকতেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। তাঁর সাথে দেখা করে পরে জিয়াউর রহমানের বাড়িতে পৌছি। জিয়া ডাকলেন, ‘পুতুল দেখ, বিলেতের থেকে আসা ডাক্তার জাফরুল্লাহ এসেছেন। ধীর পদে খাবার নিয়ে আসলেন ২৪/২৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সুন্দরী বটে, ধব ধবে ফর্সা চেহারা, তবে আজকের বুদ্ধির ঝলক সেদিন দেখিনি। সামরিক অফিসাররা সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে করেন, বুদ্ধিদীপ্তি বা লেখাপড়া তাদের বিবেচ্য নয়। নাস্তার সময় খালেদা জিয়া কম কথা বললেন, কেবল খাবার উঠিয়ে দিলেন এবং বিদায়ের সময় বললেন ‘আবার আসবেন’। ছোট তারেক তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়েছিল। ঐ বছর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেয়া প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান জিয়াকে বিগ্রেডিয়ার পদে উন্নীত করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের দায়িত্ব দেন। পরে বন্দর ও নৌমন্ত্রী জেনারেল এম এ জি ওসমানীর পরামর্শে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লেফটেনেন্ট জেনারেল ওয়াসিউদ্দিনকে ঢাকায় ফিরে আনেন এবং বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর পুর্নগঠনের দায়িত্ব দেন ও ক্যান্টনমেন্টে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী অবস্থার প্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াসিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহ ও জিয়াকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করেন এবং মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে কমান্ডার ইন চীফ ও মেজর জেনারেল জিয়াকে ডেপুটি কমান্ডার ইন চীফ মনোনীত করেন। জেনারেল ওয়াসিউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধু যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব নিতে তাকে রাজি করাতে পারলে বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনাটি ঘটতো না- সামরিক বাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার কারণে। কিছু ভুল করছেন: ৩৮ বছরের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা কমিটির বড় সাইজ বা ক্রমানুক্রমে বয়োজ্যৈষ্ঠতার হিসাব না মানা কিংবা পর্যাপ্ত নারী নেত্রীর স্থান না হওয়া অথবা নবীন তরুণদের সংখ্যাধিক্য ভুল কাজ নয়। ভুলটা হয়েছে অন্য জায়গায়। আপনার দলের কিছু চাটুকার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, সরকারের দমন নীতিতে ভীতসন্ত্রস্থ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যারা সম্ভবত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল এর প্রাসঙ্গিকতা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে পুরো জাতীয় কমিটির মনোনয়নের দায়িত্ব আপনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনাকে আপাতত দৃষ্টিতে বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শন মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তা তাদের দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা মাত্র এবং আপনাকে সবার চোখে আপনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমানের সুক্ষ প্রক্রিয়া। শাস্ত্রী মহাশয়ের তৈল লেখাটার অংশ বিশেষের উদ্ধতি সময়োপযোগী। তিনি লিখেছেন, যে তৈল দিতে পারিবে তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসার হইতে পারে, আহাম্মখ হইলেও ম্যাজিষ্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে এবং দুর্লভবাম হইয়াও উড়িষ্যার গভর্ণর হইতে পারে। এসব নেতারা প্রকৃত পক্ষে ভীত মেষ শাবক সমতুল্য। বিভিন্ন অজুহাতে তারা আপনাকে আন্দোলনের পথে না নিয়ে গুলশানের দুই বাড়ীতে অন্তরীন করে রেখেছেন। আমার মনে হয়, দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশও পড়েননি। আপনার স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত ছিল আপনাকে অযথা তেল না দিয়ে , গঠনতন্ত্রের নির্দ্ধারিত বিষয়সমূহ আপনার সামনে তুলে ধরা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেয়া। আপনাদের গঠনতন্ত্র সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭৮ সনে আগষ্ট মাসে। ঘোষনাপত্র ও গঠনতন্ত্র তৈরীতে জিয়াউর রহমান কে প্রভাবিত করেছিলেন প্রবাসী সরকারের বৈদেশিক সচিব খন্দকার মোস্তাক আহমেদের প্রিয়জন মাহবুবুল আলম চাষী, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ট সচিব ড. এম এ সাত্তার এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্যারামেডিকদের সাথে আলাপ করে জিয়াউর রহমান বুঝেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দেশে স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার সঠিক পথে এগুচ্ছে। তাই এটা তার ১৯ দফার অন্তভূক্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক গণঐক্য, জনগনের গণতন্ত্র, সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূরীকরণ, মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসন, স্থানীয় এলাকা সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টি, নারী সমাজের প্রগতি, যুব শক্তির সদ্ব্যবহার, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পল্লী উন্নয়ন, গণমুখী কৃষিনীতি, সমবায় ও গনতান্ত্রিক শ্রমনীতি, সার্বিক উন্নয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, জীবন নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষন, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় সার্র্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী সশস্ত্রবাহিনী, ধর্মীয় শিক্ষা প্রভৃতি ছিল জিয়াউর রহমানের বিএনপি সৃষ্টির ২৯ লক্ষ্য ও আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। ঘোষণায় ২৯টি লক্ষ্য ও আদর্শের কথা থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গঠনতন্ত্রে ১৭টি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের কথা লেখা আছে। কোথাও বলা হয়নি বা লেখা হয়নি যে, চেয়ারপারসন একলা সকল কমিটির সদস্যদের মনোনয়ন দেবেন। চেয়ারপারসন হিসাবে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ১০% সদস্য মনোনয়ন দানে সীমাবদ্ধ। তবে তাঁর মত নিয়ে স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জাতীয় কাউন্সিলের মিটিং ডাকতে হবে। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং কমিটির মেয়াদ তিন বছর এবং সদস্য সংখ্যা হবে ৩৫১জন + চেয়ারপারসনের মনোনীত ১০%। বছরে অন্তত পক্ষে একবার জাতীয় কাউন্সিলের সভা হবে এবং প্রতি তিনমাস পর জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হতে হবে। প্রয়োজনে চেয়ারম্যান যেকোন সময় তার ইচ্ছানুযায়ী জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা আহবান করতে পারবেন। সকল মনোনয়ন দানের জন্য গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তবে পরিষ্কারভাবে লিখিত আছে যে, ‘দলের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে চেয়ারম্যান দলের সর্বময় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় সাধন করবেন’। আপনার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিশেষত একজন ছাড়া নামের আদ্যক্ষরে এম অলংকৃত নেতারা আপনাকে দিয়ে গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করিয়েছেন, যে ক্ষমতা আপনাকে দেয়া হয়নি সে ক্ষমতা ব্যবহার করিয়ে কর্মীদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করিয়েছেন। আপনাকে পক্ষান্তরে এক রোখা একনায়করূপে চিত্রিত করেছেন। তাদের উচিত ছিল আপনাকে এসে বলা, আপনার মনোনীত তালিকাটি প্রকাশের পূর্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য আরও ৮/১০জন সিনিয়র নেতাদের দেখান। তা হলে বিবিধ প্রশ্নের উদ্ভব হতো না, ক্ষোভের সৃষ্টি হতো না, পরিবারতন্ত্র এত পাখা বিস্তার করতে পারত না। সুখবর যে, তারেক ছাড়া আপনার পরিবারের অন্য কেউ এই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়নি। দলে গণতন্ত্র না থাকলে যা হবার তাই হয়েছে। একলা দু’তিনজন কাছের মানুষের কান কথা শুনে এত বড় একটা জাতীয় কমিটি গঠন করার পরও সবার মন রক্ষা করতে পারেননি। পদ পাবার পরও খুশি হয়নি, যেমন হয়েছে শিরিন সুলতানার ক্ষেত্রে। নারী দলে তার উল্লেখযোগ্য কাজ আছে, সবার প্রিয় , সব সময় খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন তাকে করা হয়েছে স্বনির্ভর সম্পাদক। যেখানে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারার সম্ভাবনা নেই। যুগ্ম মহাসচিব ৭ জনের মধ্যে একজন মহিলাও নেই, ঠিক একই ভুল হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদকের ক্ষেত্রে -৭ জনের মধ্যে একজনও মহিলা নেত্রী নেই। ঢাকা বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপিকাকে পাওয়া গেল না ? ধর্ম বিষয়ে ৩ জন সহসম্পাদকের যৌক্তিকতা কী? জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে যুদ্ধক্ষেত্রের কোন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধার স্থান হয়নি। স্থায়ী কমিটিতে ১৯ জনের মধ্যে মাত্র একজন মহিলা। মহাসচিব সহ বিভিন্ন সম্পাদক সংখ্যা ৬৪ জন, তন্মধ্যে মহিলা আছেন মাত্র ৪ জন। পুরো দফতরে সকল বিশিষ্ট পদ ও সহ সম্পাদক, সহ কর্মী সংখ্যা ১২২ জন,তন্মধ্যে মহিলা সংখ্যা ৭ জন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। গঠনতন্ত্র অনুসারে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ন্যূনতম ১০ ভাগ মহিলা সদস্য হবার কথা যা ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩% উন্নীত হবে। ১২২ জন কর্মকর্তা জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হবার বিধান ও পালিত হয়নি। বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের জন্য জিয়াউর রহমান প্রথম ১৯৮০ সনে মঈদুল ইসলামের নেতৃত্বে নিউক্লিয়ার ফিজিসিষ্ট ড: আমেনা রহমান ও আমাকে নিয়ে নারী উন্নয়ন কমিটি করেছিলেন। কমিটির সুপারিশ ছিল প্রাইমারী স্কুলে ন্যূনতম ৫০% মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, সকল সরকারী ও অনুদান প্রাপ্ত হাইস্কুলে কমপক্ষে ২ জন শিক্ষিকা নিয়োগ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রী সংখ্যা ক্রমে ৩৩% উন্নীত করন এবং সকল সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে মহিলাদের ন্যূনতম ১০% নিয়োগ নিশ্চিত করন যা ক্রমে বাড়িয়ে ২০% পৌছার চেষ্টার কথা। জিয়াউর রহমান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পার‌্যামেডিকদের সাইকেল চালানো দেখে উদ্ধুদ্ধ হন এবং পুলিশে মহিলা নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুজন কর্মী ঢাকা পুলিশের প্রথম রিক্রুট। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাউন্সিলে ১৫ জন উপদেষ্টা থাকার কথা, অবশ্য প্রয়োজনে সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষমতা চেয়ারম্যানকে দেয়া আছে। তাই বলে কি অতিরিক্ত ৫৮ জন উপদেষ্টা। বাজারে প্রচলিত ধারনা যে স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্ত চিন্তার পর্যাপ্ত একাডেমিকদের সাথে বিএনপির যোগাযোগ নেই। বিএনপির একনিষ্ঠ সুহৃদ অধ্যাপক এমাজউদ্দিনের নাম উপদেষ্টার তালিকায় নেই। তাকে খালেদা জিয়ার প্রধান উপদেষ্টা করলে বিএনপির লাভ হবে এবং খালেদা জিয়া দেশবাসীর প্রশংসা পাবেন। গুণী শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহী ও সাহসী হতেন গুণীজনের কদর দেখে। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা নেই গঠনতন্ত্রে। গঠনতন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট ভাবে অনুসরণ না করায় কেবল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, তাই নয় জাতীয় কমিটির অনেক সদস্য সুপরিচিত নন এবং অধিকাংশের সাধারণ সদস্য পদের চাঁদা দেয়া নেই। কয়েকজনকে জাতীয় কমিটির পরিবর্তে মহানগর কমিটির দায়িত্ব দিলে ন্যায়্য হতো। বার্ষিক ৫ টাকা চাঁদার বিধান কি শেষ হবে না ? বার্ষিক চাঁদার হার ন্যূনতম ১০০/-(একশত) টাকা ধার্য করা বাঞ্চনীয়। বিএনপির চাঁদা পরিশোধ করা সদস্য সংখ্যা কত ? জাতীয় পরিকল্পনা ও অর্থ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন, বন্যা নিয়ন্ত্রন, স্থানীয় শাসন ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, শ্রম কল্যাণ, মহিলা ও যুব সম্প্রদায়, আন্তজার্তিক বিষয় বিশেষত ভারতীয় আগ্রাসন, অনুপ্রবেশ, একাধিক ট্রানজিট ও বাংলাদেশের সাথে সিকিম ভূটান তুল্য ব্যবহার পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধ বিষয়ে ‘দলের (বিএনপি) সদস্য নয় অথচ বিশেষ ক্ষেত্রে পারদশী যোগ্যতা সম্পন্ন ও সুদক্ষ ব্যক্তিদের কোঅপ্ট করার বিধান আছে’। গণতন্ত্রে এসব বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, উপাচার্য পারভীন হাসান, নারী পক্ষের শিরীন হক, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অধ্যাপক (ড:) এম আর খান, বারডেমের ডা: এ কে আজাদ খাঁন, আর্ন্তজাতিক পানি বিশেষজ্ঞ ড: এস এ খান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, আইন বিশেষজ্ঞ ডা: শাহদীন মালিক, বিআই ডি এসের বিনায়ক সেন, প্রাক্তন আমলা আলী ইমাম মজুমদার, সাদত হোসেন, শওকত আলী, আলী আকবর খান প্রভৃতি বিশিষ্ট জনকে কমিটিসমূহে কোঅপ্ট করলে কমিটির কাজের গুরুত্ব বাড়বে এবং বিএনপি জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে ও ভবিষ্যতে দেশ শাসনে আপনার সুবিধে হবে। অনুগ্রহ করে কুপমন্ডুকতা পরিহার করুন। আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন, আপনার গঠনতন্ত্রের নির্দেশ মোতাবেক ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটি সমূহ, নারীদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন সমূহে দুই বৎসর পরপর যথাযথ ভাবে নির্বাচন করে উৎসাহী কর্মীদের বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হবার সুযোগ না দিয়ে। পার্টির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভিত না নিলে জাতির জন্য গণতান্ত্রিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। ঘরকুনো কর্মীরা সন্ধ্যায় আপনার গুলশান অফিসে ভিড় করবে, কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার ডাকে মাঠে নামবে না। এরা সুখের পায়রা এবং কতক বয়োবৃদ্ধ। তারা তাদের পরিজনকে জাতীয় কমিটিতে অন্তভূক্ত করার কাজে বেশি ব্যাপৃত থাকবেন যেমন ঘটেছে ২০১৬ সনের আপনার জাতীয় কমিটির ক্ষেত্রে। যতদিন গয়েশ্বর নিতাই তাদের মেয়েদের কমিটিতে ঢোকাতে ব্যস্ত থাকবেন, ততদিন সংখ্যালঘু রাজনৈতিক কর্মীরা বিএনপিতে ভিড়তে উৎসাহী হবেন না। বিএনপি জাতীয় কমিটিতে পরিবারতন্ত্র জিন্দাবাদ- ১০ নেতার স্ত্রী, ১১ নেতার ছেলে, ৬ ভাই বোন স্থান পেয়েছেন অথচ শিষ্টাচার বজায় রেখে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি ছেলের বউকে জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেননি। স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে চারজন মহিলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ৪-৬ কোটি মানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রয়োজনে ২৫জন করলে আপত্তি কোথায় ? সদস্যরা পার্টির আভ্যন্তরীন গণতন্ত্রের ভিত্তিতে ২-৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন, মনোনীত নন। চেয়ারম্যানের মনোনয়নে আসবেন ৩-৪জন মাত্র। জাতীয় কমিটিতে ‘৭১ যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্থান অযৌক্তিক ও ভুল সিদ্ধান্ত। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে তো কোন দলীয় রাজনীতিতে নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের নিয়ন্ত্রণ: এটা সর্বজন বিদিত যে, ভারত সুকৌশলে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ করছে, ভারতের জাতীয় স্বার্থে এবং ভারতকে অখণ্ড রাখার অব্যাহত প্রচেষ্টায়। ৫ই জানুয়ারী (২০১৪)র ভোটার বিহীন নির্র্বাচনকে বৈধতা দেবার কৃতজ্ঞতায় আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধুত্বের নামে নতজানু নীতি মেনে নিয়েছে, মধ্যে মধ্যে আপনিও ভারতের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করছেন যা দেশবাসীর চোখে সুবিধাবাদী রাজনীতি বলে মনে হয়েছে। এই সরকারের বদান্যতায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চার বিলিয়ন ডলার রিমিটেন্স যাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে একজন বাংলাদেশী মারা যাচ্ছে বিএসএফের হাতে, রামপালের উল্টোদিকে পশ্চিমবাংলার সুন্দরবন এলাকা রাঙ্গাবেলীতে (যা অতীতে আমি সরজমিনে পরিদর্শন করেছি) কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র না করে মাত্র ১৫% মূলধন দিয়ে ভারত রামপালে কয়লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে আমাদের পরিবেশ ধ্বংস করতে উদ্ধত। আপনি এসম্পর্কে মৃদু প্রতিবাদ করেছেন, আপনার দলকে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির আন্দোলনে ব্যাপক ভাবে যোগ দিতে নির্দেশ দেন নি। ধারনা করা হয় যে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ভারতীয় গোয়েন্দার (জঅড) অনুচর রয়েছে বাংলাদেশে, প্রধানমন্ত্রীর আশে পাশে। তারা গুলশানে জঙ্গি ঘটনার প্রতিহত করেনি। বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাগত সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার বিল ভারত পাশ করেছে। জেনারেল মঞ্জুর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘ কারাদন্ডের ভয় দেখিয়ে জাতীয় পার্টির এরশাদকে আওয়ামী লীগের অনুগত করিয়েছেন। ভারত যে ভাবে মাওবাদী ও অন্যান্য মুক্তিকামী দলের উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালাচ্ছে, একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের স্বনির্বাচিত সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চুপ করাচ্ছে গুপ্ত হত্যা ও ক্রসফায়ারে। ভারতের ইংগিতে ১৪-১৫ হাজার বিএনপি কর্র্র্র্র্র্র্র্মী এখনও জেলে আছে। তাদের পুরো তালিকা আজও প্রকাশিত হয়নি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও কয়েক হাজার আছে। পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের বিরুদ্ধে একবারও রাস্তায় নামার চেষ্টা করেননি। আপনাকে বিব্রত করার জন্য সরকার জামাত ইস্যু প্রায়শ তুলে ধরছে। আপনি পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করার সাথে সাথে নতুন ইস্যু এনে যোগ করাচ্ছে। জনগণ পরিবর্তন চায়, দূর্নীতিমুক্ত সুষ্ঠ গণতন্ত্রের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে। দেশবাসী কেন্দ্রীকতা থেকে ও মুক্তি চায়। আপনার করনীয়: আজকে আপনি জিয়াউর রহমানের সুন্দরী বালিকা বধূ নন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আপনার পরিশ্রম ও ধীশক্তির বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে দুই দুইবার নির্বাচনে জয়ী করিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, ৪-৬ কোটি বাংলাদেশের মানুষ আপনার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রতি আপনার দায়িত্ব আছে, দায়িত্ব আছে ভাল ভাবে তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে আপনার ন্যায় নিজ গুনে এবং সততাও পরিশ্রমে বলীয়ান হয়ে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আপনার স্থানটা নেবার চেষ্টা করুক সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, দুর্নীতি ও গুন্ডামীর মাধ্যমে নয়, জিয়াউর রহমানের ন্যায় সততার ভিত্তিতে। বিএনপির গঠনতন্ত্র সংস্কার: জরুরিভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষণা ও গঠণতন্ত্রের সংশোধন প্রয়োজন। এই নিমিত্তে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন, দিলারা চৌধুরী, আসিফ নজরুল ও মাহবুবুল্লাহ প্রমুখকে দিয়ে কমিটি করে দিন, সময় দিন ১৫ দিন। তাদের সুপারিশসমূহ আলোচনা করুন জাতীয় কাউন্সিল ও স্থায়ী কমিটির জরুরি মিটিংএ। পরপরই ইউনিয়ন, উপজেলা ও মহানগর কমিটিসমূহ এবং ছাত্রদল, নারীদল ও শ্রমিকদলে নির্বাচন দিন। নির্বাচন হবে বিএনপির বার্ষিক ১০০ টাকা চাঁদা দেয়া সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে। ইউনিয়নের ওয়ার্ড কাউন্সিলে ৫১ জনের নির্বাহী কমিটি অযৌক্তিক। ৭১ জনের ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির যৌক্তিকতা কতটুকু তা বিবেচনায় নিতে হবে। ২৫ বৎসরের অধিক বয়সী কেউ ছাত্র দলের নেতৃত্বে থাকবে না। কে কোন নেতার বউ বা মেয়ে সেটা বিবেচ্য হবে না। বিবেচিত হবে ওয়ার্ডের বিএনপি সদস্যরা তাকে চিনে কিনা, তার উপর বিভিন্ন শ্রেণীর মহিলাদের ভরসা আছে কিনা। কোন নেতাকে একাধিক পদের দায়িত্ব দেয়া সমাচীন নয়। পার্টিতে আভ্যন্তরীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। এতে পার্টির সর্বস্তরে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পিছপা হবে না। যদি পার্টি তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। জেলে থাকা কর্মীদের পরিবারের সাথে অনুগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। জেল থেকে বেরুলে অবশ্যই তাদের আপনার অফিসে ডেকে এনে আলাপ করবেন, সাহস দেবেন। এরূপ মিটিং অবশ্যই মহাসচিব ও আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে সঙ্গে রাখবেন। দলে সংখ্যালঘু সদস্যদের স্বল্পতার ন্যায় বিএনপিতে বুদ্ধিজীবিদের সংখ্যার দরিদ্রতা আছে। স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টাদের মেয়াদ দুই বছরের মেয়াদে সীমিত করুন। উপদেষ্টাদের বিভিন্ন কমিটির সাথে যুক্ত করুন, কতককে জেলা কমিটির সাথেও যুক্ত করে দিতে পারেন। জনগণের সনদ: দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সিনিয়র নেতা, ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা নেত্রীদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে স্থির করা ‘জনগণের সনদ’। জনগণের সদস্যদের রূপরেখার খসড়া দুমাসের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা করে চুড়ান্ত করুন। কিছু সুপারিশ- সামরিক বাহিনীর দরে সকল শ্রমিক ও দরিদ্র পরিবারদের রেশন সুবিধা প্রদান, জীবনযাত্রা ব্যয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে স্থির হবে শ্রমিকের বেতন । সকল শ্রেনীর জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে শুরুতে ২জন এবং ২০২৫ সনের মধ্যে চারজন গ্রাজুয়েট ডাক্তারের সার্বক্ষনিক অবস্থান নিশ্চিতকরন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ইসিজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফী ও অপারেশন ব্যবস্থা থাকবে। রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে কঠিন রোগাক্রান্তদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু করা হবে সুলভে বিকল কিডনী, ক্যান্সার ও হৃদরোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। জিপির রেফারেল স্লিপ চাড়া কোন রোগী সরাসরি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করতে পারবে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ৪৫০টি ওষুধের মূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে প্রনোদনা দেয়া হবে। প্রত্যেক শহরে জেনারেল প্রাকটিশনার পদ্ধতি চালু হবে যেখানে সকল নাগরিক পরামর্শ ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিনা খরচে পাবেন। সরকারী বেতন ভুক্ত চিকিৎসক ও শিক্ষকরা কোনরূপ প্রাইভেট প্রাকটিশ বা টিউশনি করতে পারবে না। বিচারপতিদের সান্ধ্যকালীন পরামর্শ করতে দেয়া যেমন অন্যায়, ঠিক তেমনি বিঘ্ন সৃষ্টি করে সরকারী চিকিৎসক ও শিক্ষকদের প্রাইভেট প্রাকটিসে। হযরত আয়েশা, আবুবকর, ওমর , হাজী মুহাম্মদ মহসীন, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুর্য সেন, ইলামিত্র, প্রীতিলতা ওয়ার্দা, বেগম রোকেয়া, মুজিবপত্নী ফজিলাতুননেছা, সকল জাতীয় নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের বীর ও বীরাঙ্গনাদের কাহিনী পাঠ্য পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নিশ্চিত করা হবে মফস্বলের স্কুল কলেজ থেকে পাশ করা ৫০% ছাত্রের স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বদ্যিালয়ের ভর্তির কেন্দ্রীকতার নিয়ম বাতিল করে সরাসরি বিভাগে মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে পারবে। মাদ্রাসা শিক্ষাতে বিজ্ঞান, মুক্তিযুদ্ধ, অংক, ইংরেজী ও কম্পিউটার শিক্ষা সংযুক্ত করা হবে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সুষ্ঠ নির্বাচন হবে। সকল সরকারী কর্মকর্তা এবং বিচারপতিদের নিয়োগের সময় এবং প্রতিবছর তাদের পুরো সম্পদের বিবরণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এতে দুর্নীতি কমবে। গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনের লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশকে ১০টি প্রদেশ বা ১৭টি স্টেটে ভাগ করে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক, আন্ত:প্রদেশ স্টেট যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিমান ও নৌবন্দরসমূহ, বিজিবি, সামরিক ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল সমূহ ও কর ব্যবস্থাপনা। মেডিকেলসহ সকল শিক্ষা, পুলিশ, চিকিৎসা, আন্ত:জেলা যোগাযোগ প্রভৃতি হবে প্রদেশ বা স্টেট শাসনের অর্ন্তভুক্ত। হাইকোর্ট প্রদেশে অবস্থিত হলেও নিয়ন্ত্রিত হবে সুপ্রিমকোর্ট দ্বারা। একটি অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিকতার স্তরের নাম বিভাগ। বিভাগে জনগনের কোন লাভ হয় না। বিভাগ বিলুপ্তির সুপারিশ ছিল ১৯৩৪ সনে ফ্লাউড কমিশনের। প্রাদেশিক বা ষ্টেট গর্ভনর কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত হতে পারে বা সরাসরি স্থানীয় জনগনের ভোটেও নির্বাচিত হতে পারে। কোন রাজনৈতিক কর্মী সরাসরি খুনে জড়িত না হলে, অভিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মী এক মাসের মধ্যে জামিন পাবে। ১০০ দিনের মধ্যে বিচার চুড়ান্ত করতে হবে। বিচারকালীন সময়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মী দ্বিতীয় বা প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন পাবেন। পুলিশকে দলীয় পান্ডা হিসেবে ব্যবহার করা হবে না। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা হবে তাদের কাজ। কেবলমাত্র ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত ও দলীয় পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ পুলিশের বিচার হবে, অন্যদের নয়। ভারতীয় সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পানির ন্যায্য হিসাব আদায় করা হবে প্রতিবেশী ভারত থেকে, নতুবা কোনো ট্রানজিট নয়। আপনার হাতে বেশি সময় নেই: ২০ দলের বাইরের বিরোধী দলসমূহকে একত্রিত করে বাংলাদেশে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দেলনকে সুসংহত করার জন্য আপনার হাতে সময় আছে বড়জোর নয় মাস। সম্ভবত এই সময়ের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় রাজনীতির আলোকে বিচারের রায় বেরুবে। এই কয়েক মাস পরিশ্রম করলে জনগণের রায় আপনার পক্ষে আসার সম্ভাবনা সমধিক। ইতিমধ্যে তারেক রহমানের মামলার রায় বেরিয়েছে। অনৈতিক কমিশন নেবার মামলায় আদালত তারেক জিয়ার ৭বৎসরের জেল দিয়েছে। এটা কি সুষ্ঠ বিচারের রায় না রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ? এর ফয়সালা ছাত্রদলের ২০-৩০ জনের মিছিলে হবে না, এতে কেবল আপনাদের শক্তির অপচয় এবং ভুল কাজ। ফয়সালা হবে মূলত: সুষ্ঠ গণতন্ত্রের আন্দোলনে এবং উচ্চ আদালতে। স্মরণযোগ্য যে, বিচারপতিদের মধ্যে প্রাক্তন ছাত্রলীগের কর্মীদের বাহুল্য রয়েছে। তা হলেও কতক জজসাহেবদের বিবেক নিশ্চয় এখনও কার্যক্ষম এবং স্বল্প সংখ্যক বিচারপতির ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী স্বচেষ্ট রয়েছেন। মান্না, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের জামিন না দেয়া এবং আমার দেশ ও অন্যান্য কয়েকটি মিডিয়া বন্ধ করে দেবার কারন অনুসন্ধানের জন্য ভবিষ্যতে বিচারকদের জনতার আদালতে বিচার হতে পারে। ভবিষ্যত আন্দোলনের স্বার্থে নিয়মিত ভাবে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আপনার বাড়ীতে তৃণমূল কর্মীদের সাক্ষাত দিন। কর্মীদের দেখভাল করার জন্য একজন ৫০ অনুর্ধ উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচারের সাথে পরিচিত কিন্তু খয়ের খা নয়, এরূপ একজন মহিলা বিশেষ সহকারী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তার বিশেষ দায়িত্ব হবে বিভিন্ন কমিটির কার্যকলাপের সার সংক্ষেপ এবং অন্তত পক্ষে ১০টি দৈনিক পত্রিকার মুখ্য সংবাদ গুলো নিয়ে আপনার সাথে প্রতিদিন আলোচনা করা। আপনার রাতের গুলশান অফিসের সময় সন্ধ্যায় করলে ভাল হবে। প্রতিমাসে আপনাকে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুটি করে জনসভা করতে হবে। আপনার ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য হবে দেশের মেগা দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, খায়রুল হকের মত বিচারপতিদের আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে রায়, সরকার মনোনীত পরিচালনা পর্যদ ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার কোটি টাকা সরকারী ব্যাংক থেকে লুট পাট, কুইক রেন্টাল মারফত কুইক প্রফিট যা পরে সরকারের কিছু ব্যক্তির পকেটে ফেরত আসা, কি করে ৭০০০ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় ত্রিশ হাজার কোটি টাকাতে পৌঁছালো, দুর্বিসহ জীবন যাত্রার উপর নতুন করে বর্ধিত বিদ্যুত ও গ্যাস বিল, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে ভবিষ্যতে দেশের ক্ষতির কথা, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বিশেষজ্ঞ সন্তানের বেতন ভাতা কত এবং কোন মুদ্রায় পরিশোধিত হয়, সেলফোন ব্যবসায়ীদের এর কে কত অংশ পায়, প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিয় গভর্ণরের ভারতীয় আইটি এক্সপার্ট রাকেশ আস্তানার কারণে বা সম্পৃক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভয়ানক ক্ষতি, ভারতীয় পরামর্শ সময়মত না আসায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৪ জন সামরিক কর্মকর্তা এবং গুলশানে জঙ্গী হামলায় ২২ জনের প্রাণহানি, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সের পরও আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা প্রদানে ভারতের একগুয়েমী ও অনীহা, সীমান্তে প্রতি সপ্তাহে গুলি করে হত্যা, নোয়াখালীর মহুরীর চরে স্থলসীমান্ত নিয়ে ভারত সরকারের নতুন আবদার, পানির দামে ট্রানজিট ফি প্রভৃতি জনগণকে নাড়া দেবে। একই তথ্য বিশেষতঃ ভারতের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা বারে বারে বলতে হবে। মাত্র দুবার এ সম্পর্কে মৃদুভাবে উল্লেখ করায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। জনসভায় শক্ত ভাবে এই সব তথ্য উপস্থাপন করুন, ভারত সরকারের চিন্তায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য। ১৯৭২ সনে মওলানা ভাসানী যে ঐতিহাসিক দায়িত্বভার নিয়েছিলেন আপনাকে সেই দায়িত্বভার নিতে হবে ‘ইসলামাবাদের জিজ্ঞির ছিড়েছি, দিল্লীর অনুগত হবার জন্য নয়’। বিভাগ বিলুপ্ত করে জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন কেন্দ্রীকতার বিপরীতে কিভাবে ‘স্থানীয় এলাকার সরকার’ প্রদেশ বা স্টেট সৃষ্টির মাধ্যমে জনগনকে অধিকতর দেশ পরিচালনায় সম্পৃক্ত করবেন তা জনসাধারণকে অবহিত করুন। দুর্নীতির কারণে সরকারের তহবিল ফুরিয়ে গেছে বলে কি, অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীরা পুরো পেনশনের টাকা একবারে পাবেন না? আপনার দৃঢ়চেতা পদক্ষেপ আমাদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত নিরাপদ হবে এবং তারেক জিয়ার দেশে ফেরার পথ সুগম হবে। জাতীয় ঐক্যে বন্ধ হবে রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদ। জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র ও সুষ্ঠ নির্বাচনের বিকল্প নেই। বুঝে সুজে সকলের সাথে আলাপ করে জামায়াত সম্পর্কে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিন। দেশবাসীর কাছে তাদের পুনরায় ক্ষমা চাইতে হবে। অধ্যাপক গোলাম আজম প্রদর্শিত ১৯৯১সনের একক তৃতীয় ধারার রাজনীতি হতে পারে জামায়াতের জন্য মঙ্গলকর কূটকৌশল। অচিরে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্মিলিত বিরোধীদল হিসেবে অংশ গ্রহনের আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাসদের আ স ম আবদুর রব প্রমুখদের সাথে নিয়ে একমাসের মধ্যে প্রথম জনসভায় অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিন। বিএনপির বর্তমান জোটের নেতারাতো থাকছেনই, আপনি জেলে থাকলেও সম্মিলিত বিরোধী দলের বিজয় সুনিশ্চিত। জয় হোক সুষ্ঠ জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্রের। পতন হবে প্রতারনার উন্নয়ন ও সরকারের মেগা দুর্নীতির। কেন্দ্রিকতা নয়, নির্বাচিত স্থানীয় সরকারই লক্ষ্য। - See more at: http://www.bd24live.com/bn/article/100868/index.html#sthash.TiDdsrJc.dpuf

৩. ভোলা জেলাঃ-
ভোলা জেলার নামকরণের পিছনে স্থায়ীভাবে একটি লোককাহিনী প্রচলিত আছে যে, ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার মত অপ্রশস্ত ছিলনা। একসময় এটি পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার করা হত। বুড়ো এক মাঝি এখানে খেয়া নৌকার সাহায্যে লোকজন পারাপার করতো। তাঁর নাম ছিল ভোলা গাজী পাটনী। বর্তমানে যোগীরঘোলের কাছেই তাঁর আস্তানা ছিল। এই ভোলা গাজীর নামানুসারেই এক সময় স্থানটির নাম দেয়া হয় ভোলা। সেই থেকে আজ অব্দী ভোলা নামে পরিচিত।

৪. ঝালকাঠি জেলাঃ-
জেলার নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জেলার জেলে সম্প্রদায়ের ইতিহাস। মধ্যযুগ-পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি আর বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় জেলেরা বসতি স্থাপন করে। এর প্রাচীন নাম ছিল ‘মহারাজগঞ্জ’। মহারাজগঞ্জের ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশ চন্দ্র জমিদারি বৈঠক সম্পাদন করতেন এবং পরবর্তীতে তিনি এ স্থানটিতে এক গঞ্জ বা বাজার নির্মাণ করেন। এ গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রি করত। এ জালের কাঠি থেকে পর্যায়ক্রমে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে জেলেরা এখানে মাছ শিকারের জন্য আসত এবং যাযাবরের মতো সুগন্ধা নদীর তীরে বাস করত। এ অঞ্চলের জেলেদের পেশাগত পরিচিতিকে বলা হতো ‘ঝালো’। এরপর জেলেরা বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। এভাবেই জেলে থেকে ঝালো এবং জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে তোলার কারণে কাটি শব্দের প্রচলন হয়ে ঝালকাটি শব্দের উৎপত্তি হয়। পরবর্তীকালে ঝালকাটি রূপান্তরিত হয় ঝালকাঠিতে।১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা লাভ করে।

৫. পটুয়াখালী জেলাঃ-
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি থেকে জানা যায যে, পটুয়াখালী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্ভক্ত ছিল। পটুয়াখালী নামকরণের পিছনে প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের লুন।টন অত্যাচারের ইতিহাস জড়িত আছে বলে জানা যায়। পটুয়াখালী শহরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত নদীটি পূর্বে ভরনী খাল নামে পরিচিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে পর্তুগীজ জলদস্যুরা এই খালের পথ দিয়ে এস সন্নিহিত এলাকায় নির্বিচারে অত্যাচার হত্যা লুন্ঠন চালাত। স্থানীয় লোকেরা এই হানাদারদের ‘নটুয়া’ বলত এবং তখন থেকে খালটি নটুয়ার খাল নামে ডাকা হয়। কথিত আছে, এই “নটুয়ার খাল” খাল থেকে পরবর্তীতে এ এলাকার নামকরণ হয় পটুয়াখালী।

৬. পিরোজপুর জেলাঃ-
“ফিরোজ শাহের আমল থেকে ভাটির দেশের ফিরোজপুর,
বেনিয়া চক্রের ছোয়াচ লেগে পাল্টে হলো পিরোজপুর”

উপরোক্ত কথন থেকে পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলাল উদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেয় বংশধর হিসেবে দাবি করেছিলেন বলে জানা যায়। বাংলার সুবেদার শাহ।। সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসে আত্মগোপন করেন। এক পর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাড়ে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয়, শাহ সুজা তাঁর দুই কন্যাসহ আরাকান রাজ্যে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী ও এক শিশুপ্রত্র রেখে যান। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে আসে এবং বর্তমান পিরোজপুরের পাশ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিল ফিরোজ এবং তাঁর নামানুসারে হয় ফিরোজপুর। কালের বিবর্তনে ফিরোজপুরের নাম হয় ‘পিরোজপুর’। পিরোজপুর ১৯৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জেলার রূপান্তরিত হয়।

২। চট্টগ্রাম বিভাগঃ-

১. বান্দরবন জেলাঃ-
বান্দরবন জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি আছে, এলাকার বাসিন্দাদের মুখে প্রচলিত রূপকথায় অত্র এলাকায় এ সময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এ ই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অতি বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেলে বানরের দল ছড়া পাড় থেকে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই র্দশ্য ধেকতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে জায়গাটি “ম্যাঅকছি ছড়া” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মার্মা ভাষায় ম্যাঅক শব্দটির অর্থ হল বানর আর ছিঃ শব্দটির অর্থ হল বাধঁ। কালের প্রবাহে বাংল ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম বান্দরবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবনের প্রকৃত নাম “রদ ক্যওচি চিম্রো’।

২. ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলাঃ-
১৯৮৪ সালে ব্রাক্ষ্মবাড়িয়া জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার আগে এটি কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমা ছিল। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

৩. চাঁদপুর জেলাঃ-
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস রেনেল তৎকালনি বাংলার যে মানচিত্র অংকন করেছিলেন তাতে চাঁদপুর নামে এক অখ্যাত জনপদ ছিল। তখন চাঁদপুরের দক্ষিণে নরসিংহপুর নামক ( বর্তমানে যা নদীগর্ভে বিলীন) স্থানে চাঁদপুরের অফিস-আদালত ছিল। পদ্মা ও মেঘনার সঙ্গমস্থল ছিল বতৃমান স্থান থেকে পাওয়া প্রায় ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে। মেঘনা নদীর ভাঙ্গাগড়ার খেলায় এ এলাকা বর্তমানে বিলীন। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। ঐতিহাসিক জে.এম সেনগুপ্তের মতে চাঁদরায়ের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কথিত আছে চাঁপুরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাষক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নামানুসারে চাঁদপুর। ১৮৭৮ সালে প্রথম চাঁদপুর মহকুমার সৃষ্টি হয়। ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী চাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৪. চট্টগ্রাম জেলাঃ-
চট্টগ্রামের প্রায় ৪৮ টি নামের খোঁজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে রম্যভূমি, চাটিগাঁ, চাতগাও, রোসাং, চিতাগঞ্জ, জাটিগ্রাম ইত্যাদি। চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে, পন্ডিত বার্নোলির মতে, আরবি ‘শ্যাত (খন্ড) অর্থ বদ্বীপ, গাঙ্গ অর্থ গঙ্গা নদী থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। অপর এক মতে ত্রয়োদশ শতকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন বার জন আউলিয়া। তাঁরা একটি বড় বাতি বা চেরাগ জ্বালিয়ে উঁচু জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘চাটি’ অর্থ বাতি বা চেরাগ ্এবং গাঁও অর্থ গ্রাম। এ থেকে নাম হয় ”চাটিগাঁও”। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোন্সের মতে, এ এলাকার একটি ক্ষুদ্র পাখির নাম থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মোঘল সম্রাজের অংশ হয়। আরাকানদের পরাজিত করে মোঘল এর নাম রাখেন ইসলামাবাদ। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মীর কাশিম আলী খান ইসলামাবাদকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করেন। পরে কোম্পানি এর নাম রাখেন চিটাগাং।

৫. কুমিল্লা জেলাঃ-
প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত লোককথা আছে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াং কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত। তাঁর বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া
( Kiamolonkia) নামক স্থানের বর্ণনা রয়েছে তা থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৬. কক্সবাজার জেলাঃ-
আরব ব্যবসয়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ ৮ম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজার সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হয়। ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ হয়। ১৭৮৪ সালে রার্মারাজ বোধাপায়া আরাকান দখল করে নেয়। ১৭৯৯ সালে বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ১৩ হাজার আরাকনি কক্সবাজার থেকে পালিয়ে যায়। এদর পূনর্বাসন করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজন হিরাম কক্সকে নিয়োগ করে। পূনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই হিরাম কক্স মৃত্যু বরণ করেন। পূনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি।

৭. ফেনী জেলাঃ-
ফেনী নদীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় ফেনী। মধ্যযুগে কবি ও সাহিত্যিকদের কবিতা ও সাহিত্যে একটি বিশেষ নদীর স্রোদধা ও ফেনী পরাপারের ঘাট হিসেবে আমরা ফনী শব্দটি পাই। ষোড়শ শতাব্দীতে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় লিখেছেন, ‘ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বে মহাগিরি পার পাই তার’। সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত ‘বাহরিস্থান-ই-গায়েরীতে’ ফনী শব্দ ফেনীতে পরিণত হয়। আটারো শতকের ষেষ ভাগে কবি আলী রেজা প্রকাশ কানু ফকির তাঁর পীরের বসতি হাজীগাঁওয়ের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ফেনীর দক্ষিণে এক বর উপাম, হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম’। মোহাম্মদ মুকিম তাঁর পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন,”ফেনীর পশ্চিমভঅগে জুগিদিয়া দেশ…………….। বলাবাহুল্য তাঁরাও নদী অর্থে ফেনী শব্দ ব্যবহার করেছেন। মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় আদি শব্দ ‘ফনী’ ফেনীতে পরিণত হয়েছে।

৮. খাগড়াছড়ি জেলাঃ-
খাগড়াছড়ি একটি নদীর নাম। নদীর পাড়ে খাগড়া বন থাকায় খাগড়াছড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।

৯. লক্ষীপুর জেলাঃ-
লক্ষীপুর জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

১০. নোয়াখালী জেলাঃ-
নোয়াখালী জেলা প্রচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম ছিল সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে, একবার ত্রিপুরার পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভঅবে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করে।এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানি প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্ঝ, সোইমুড়ী ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল খালকে নোয়াখালীর ভাষায় ‘নোয়া (নুতুন) খাল’ বলা হত এর ফলে ‘ভুলুয়া’ নামটি পরিবর্তিত হয়ে ১৬৬৮ সালে নোয়াখালী নামে পরিচিতি লাভ করে।

১১. রাঙ্গামাটি জেলাঃ-
রাঙামাটি জেলা নামকরণ সম্পর্কে বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশ জেলা : নামকরণের ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায় তা হলো- এই এলাকায় পর্বতরাজি গঠিত হয়েছিল টারশিয়রি যুগে। এই যুগের মাটির প্রধান ব্যতিক্রম এবং বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর রঙ লালচে বা রাঙা। এই এলাকার গিরিমৃত্তিকা লাল এবং মাটিও রাঙা বলেই এই জনপদের নাম হয়েছে রাঙামাটি। প্রকৃতি সূচক এই নামকরণটির বিষয়ে অন্য প্রচলিত কথাপরম্পরা হলো- বর্তমান রাঙামাটি জেলা সদরের পূর্বদিকে একটি ছড়া ছিল, যা এখন হ্রদের মধ্যে নিমজ্জিত। এই হ্রদের স্বচ্ছ পানি যখন লাল বা রাঙামাটির উপর দিয়ে ঢাল বেয়ে প্রপাত ঘটাতো, তখন তাকে লাল দেখাতো। তাই এই ছড়ার নাম হয়েছিল ‘রাঙামাটি’। এই জেলা সদরের পশ্চিমে আরও একটি ছাড়া ছিল। অনুরূপ কারণে তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘রাঙাপানি’। এই দুই রাঙা ছড়ার মোহনার বাঁকেই গড়ে উঠেছে বর্তমান জেলা শহর। যা মূলত ছিল অনাবাদী টিলার সমষ্টি এবং বহু উপত্যকার এক নয়নাভিরাম বিস্ময়ভূমি। এই দুটি ছড়া রাঙামাটি ও রাঙাপানি হতে ‘রাঙামাটি’ জেলার নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৩ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা গঠন করা হয়।

৩। ঢাকা বিভাগঃ-

১. ঢাকা জেলাঃ-
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মোঘল-পূর্ব যুগে কিছু গুরুত্বধারন করলেও শহরটি ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করে মোঘল যুগে। ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট করে তেমন কিছু জানা যায় না। এ সম্পর্কে প্রচলিত মতগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপঃ ক) একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল; খ) রাজধানী উদ্বোধনের দিনে ইসলাম খানের নির্দেশে এখানে ঢাক অর্থাৎ ড্রাম বাজানো হয়েছিল; গ) ‘ঢাকাভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল; ঘ) রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অথবা এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা।
কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাই রাজা মন্দিরের নাম ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।আবার অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্দির রূপ ধারণ করে এবং তা থেকেই এই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খান চিশতি সুবাহ বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন এবং সম্রাটের নামানুসারে এর নামকরণ করে জাহাঙ্গীরনগর।

২. ফরিদপুর জেলাঃ-
ফরিদপুরের নামকরণ করা হয়েছে এখানকার প্রখ্যাত সুফী সাধক শাহ শেখ ফরিদুদ্দিনের নামানুসারে।

৩. গাজীপুর জেলাঃ-
বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশের জেলা : নামকরণের ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে জনৈক মুসলিম কুস্তিগির গাজী এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি বহুদিন সাফল্যের সঙ্গে এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। এ কুস্তিগির/পাহলোয়ান গাজীর নামানুসারেই এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর বলে লোকশ্রুতি রয়েছে। আরেকটি জনশ্রুতি এ রকম সম্রাট আকবরের সময় চবি্বশ পরগনার জায়গিরদার ছিলেন ঈশা খাঁ। এই ঈশা খাঁরই একজন অনুসারীর ছেলের নাম ছিল ফজল গাজী। যিনি ছিলেন ভাওয়াল রাজ্যের প্রথম ‘প্রধান’। তারই নাম বা নামের সঙ্গে যুক্ত ‘গাজী’ পদবি থেকে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর। গাজীপুর নামের আগে এ অঞ্চলের নাম ছিল জয়দেবপুর। এ জয়দেবপুর নামটি কেন হলো, কতদিন থাকল, কখন, কেন সেটা আর থাকল না সেটিও প্রাসঙ্গিক ও জ্ঞাতব্য। ভাওয়ালের জমিদার ছিলেন জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী। বসবাস করার জন্য এ জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী পীরাবাড়ি গ্রামে একটি গৃহ নির্মাণ করেছিলেন। গ্রামটি ছিল চিলাই নদীর দক্ষিণ পাড়ে। এ সময় ওই জমিদার নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে এ অঞ্চলটির নাম রাখেন ‘জয়দেবপুর’ এবং এ নামই বহাল ছিল মহকুমা হওয়ার আগ পর্যন্ত। যখন জয়দেবপুরকে মহকুমায় উন্নত করা হয়, তখনই এর নাম পাল্টে জয়দেবপুর রাখা হয়। উল্লেখ্য, এখনো অতীতকাতর-ঐতিহ্যমুখী স্থানীয়দের অনেকেই জেলাকে ‘জয়দেবপুর’ বলেই উল্লেখ করে থাকেন। গাজীপুর সদরের রেলওয়ে স্টেশনের নাম এখনো ‘জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন’। তবে বিস্তারিত আলোচনায় গেলে বলতেই হয়, গাজীপুরের আগের নাম জয়দেবপুর এবং তারও আগের নাম ভাওয়াল। গাজীপুরকে ১৯৮৪খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ জেলা এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারী রোজ: সোমবার সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হয়।

৪. গোপালগঞ্জ জেলাঃ-
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস। অতীতের রাজগঞ্জ বাজার আজকের জেলা শহর গোপালগঞ্জ। আজ থেকে প্রায় শতাব্দীকাল পূর্বে শহর বলতে যা বুঝায় তার কিছুই এখানে ছিলোনা। এর পরিচিতি ছিলো শুধু একটি ছোট্ট বাজার হিসেবে। এঅঞ্চলটি মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদার রানী রাসমণির এলাকাধীন ছিলো। উল্লেখ্য রানী রাসমণি একজন জেলের মেয়ে ছিলেন। সিপাই মিউটিনির সময় তিনি একজন উচ্চ পদস্থ ইংরেজ সাহেবের প্রাণ রক্ষা করেন। পরবর্তীতে তারই পুরস্কার হিসাবে বৃটিশ সরকার রাসমণিরকে মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদারী প্রদার করেন এবং তাঁকে রানী উপাধিতে ভূষিত করেন। রানী রাসমণির এক নাতির নাম ছিলো নব-গোপাল তিনি তাঁর স্নেহাস্পদ নাতির নাম এবং পুরানো ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নাতিন নামের ‘গোপাল’ অংশটি প্রথমে রেখে তার সাথে রাজগঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগ করে এ জাযগাটির নতুর নামকরণ করেন গোপালগঞ্জ। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর জেলার মহকুমা থেকে গোপালগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হয়।

৫. জামালপুর জেলাঃ-
সাধক দরবেশ হযরত শাহ জামাল (র) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত গরো পাহাড়ের পাদদেশে যমুনা-ব্রক্ষ্মপুত্র বিধৌত বাংলাদেশের ২০-তম জেলা জামালপুর। হযরত শাহ জামাল (র) এর নামানুসারে জামালপুরের নামকরণ হয়।

৬. কিশোরগঞ্জ জেলাঃ-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ মহকুমার জন্ম হয়। মহকুমার প্রথম প্রশাসক ছিলেন মিঃ বকসেল। বর্তমান কিশোরগঞ্জ তৎকালীন জোয়ার হোসেনপুর পরগনার অন্তর্ভক্ত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকেও কিশোরগঞ্জ এলাকা ‘কাটখালী’ নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাসবিদদের ধারণা ও জনশ্রুতি মতে এ জেলার জমিদার ব্রজকিশোর মতান্তরে নন্দকিশোর প্রামানিকের ‘কিশোর’ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাট বা গঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগ করে কিশোরগঞ্জ নামকরণ করা হয়।

৭. মাদারীপুর জেলাঃ-
মাদারীপুর জেলা একটি ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সাধক হযরত বদরুদ্দিন শাহ মাদার (র) এর নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকালে মাদারীপুরের নাম ছিল ইদিলপুর। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

৮. মানিকগঞ্জ জেলাঃ-
মূরত সংস্কৃত ‘মানিক্য’ শব্দ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। মানিক হচ্ছে চুনি পদ্মরাগ। গঞ্জ শব্দটি ফরাসী। মানিকগঞ্জের নামের ঋৎপত্তি ইতিহাস আজও রহস্যবৃত। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে সুফি দরবেশ মানিক শাহ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগরে আসেন এবং খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।কারও মতে দূর্ধর্ষ পাঠান সর্দার মানিক ঢালীর নামানুসারে মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি। আবার কারো মতে, নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিশাবাস ঘাতক মানিক চাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার নমানুসারে ১৮৪৫ সালের মে মাসে মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ হয়। মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ সম্পর্কীত উল্লেখ্য তিনটি পৃথক স্থানীয় জনশ্রুতি এবং অনুমান নির্ভর। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি, তবে মানিক শাহের নামানুসারে মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ সম্পর্কীত জনশ্রুতি এবং ঘটনা প্রবাহ থেকে যে চিত্র পাওয়া যায় তাই সঠিক বলে ধরা হয়।

৯. মুন্সীগঞ্জ জেলাঃ-
মুন্সিগঞ্জে প্রাচীন নাম ছিল ইদ্রাকপুর। মোঘল শাসনামলে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হায়দার হোসেন নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোঘল শাসক দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত ছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন ও জনহিতৈষী মুন্সী হায়দার হোসেনের নামে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সীগঞ্জ। কারো কারো মতে জমিদার এনায়েত আলী মুন্সীর নামানুসারে মুন্সীগঞ্জে নামকরণ করা হয়।

১০. ময়মনসিংহ জেলাঃ-
ময়মনসিংহ জেলার নাম নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এ অঞ্চলে একটি নুতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই থেকে নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। সলিম যুগের উৎস হিসেবে নাসিরাবাদ, নাম আজও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও নাসিরাবাদ কথাটি উল্লেখ্য করা হচ্ছে না। ১৭৭৯ সালে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি ‘ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সকার বাজুহার পরগনা হিসেবে লিখিত আছে। যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা হয়।

১১. নারায়ণগঞ্জ জেলাঃ-
১৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বিকন লাল পান্ডে( বেণু ঠাকুর বা লক্ষীনায়ায়ণ ঠাকুর) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা গ্রহণ করে। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি উইলের মাধ্যমে শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ।

১২. নেত্রকোণা জেলাঃ-
নেত্রকোণার নামকরণ হয়েছে নাটেরকোণা নামক গ্রামের নাম থেকে।

১৩. নরসিংদী জেলাঃ-
কথিত আছে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি নরসিংহ নামক একজন রাজার শাসনাধীন ছিল। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্যক্ষ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করেছিলেনঅ তাঁরই নামানুসারে নরসিংদী নামটি আবির্ভূত হয়। নরসিংহ নামের সাথে ‘দী’ যুক্ত হয়ে নরসিংদী হয়েছে। নরসিংহদী শব্দের পরিবর্তিত রূপই “নরসিংদী”।

১৪. রাজবাড়ী জেলাঃ-
রাজা সূর্য্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ করা হয়। রাজা সূর্য্য কুমারের পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এস আত্মগোপন করেন। পরে তাঁর পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তাঁরই পুত্র রাজা সূর্য্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৮৪ সালে ১মার্চ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৫. শরীয়তপুর জেলাঃ-
বৃটিশ বিরোধী তথা ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুরের নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে ১লা মার্চ শরীয়তপুর জেলা শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী জনাব নাজিম উদ্দিন হাসিম।

১৬. শেরপুর জেলাঃ-
বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শের আলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর।

১৭. টাঙ্গাইল জেলাঃ-
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁর মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে।
টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’ শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’ শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইলের নামকরণ নিয়ে আরো বিভিন্নজনে বিভিন্ন সময়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন। কারো কারো মতে, বৃটিশ শাসনামলে মোগল প্রশাসন কেন্দ্র আটিয়াকে আশ্রয় করে যখন এই অঞ্চল জম-জমাট হয়ে উঠে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়িছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন, যাকে বর্তমান টাঙ্গাইলের স্থানীয় লোকেরা বলত ‘টাঙ্গা’। বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এ অঞ্চলের টাঙ্গা গাড়ির চলাচল স্থল পথে সর্বত্র। আল শব্দটির কথা এ প্রসঙ্গে চলে আসে। বর্তমান টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে এই আল শব্দটির যোগ লক্ষ্য করা যায়। আল শব্দটির অর্থ সম্ভবত সীমা নির্দেশক যার স্থানীয় উচ্চারণ আইল। একটি স্থানকে যে সীমানা দিয়ে বাঁধা হয় তাকেই আইল বলা হয়। টাঙ্গাওয়ালাদের বাসস্থানের সীমানাকে ‘টাঙ্গা+আইল’ এভাবে যোগ করে হয়েছে ‘টাঙ্গাইল’ এমতটি অনেকে পোষণ করেন। আইল শব্দটি কৃষিজমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শব্দটি আঞ্চলিক ভাবে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। টাঙ্গাইলের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে স্বাভাবিক ভাবে এর ভূমি উঁচু এবং ঢালু। স্থানীয়ভাবে যার সমার্থক শব্দ হলো টান। তাই এই ভূমিরূপের কারণেই এ অঞ্চলকে হয়তো পূর্বে ‘টান আইল’ বলা হতো। যা পরিবর্তীত হয়ে টাঙ্গাইল হয়েছে।

৪। খুলনা বিভাগঃ-

১. বাগেরহাট জেলাঃ-
‍‍সুন্দরবনে বাঘের বাস
দাড়টানা ভৈরব পাশ
সবুজ শ্যামলে ভরা
নদী বাঁকে বসতো যে হাট
তার নাম বাগের হাট।
এক সময় বাগেরহাটের নাম ছিল খলিফাতাবাদ বা প্রতিনিধির শহর। খানজাহান আলী (রঃ) গৌড়ের সুলতানদের প্রতিনিধি হিসেবে এ অঞ্চল শাসন করতেন। কেউ কেউ মনে করেন, বরিশালের শাসক আঘা বাকের এর নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। কেউবা বলেন, পাঠান জায়গীদার বাকির খাঁ এর নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। আবার কারো মতে, বাঘ শব্দ হতে বাগেরহাট নাম হয়েছে। জনশ্রুতি আছে খানজাহান আলী (রঃ) এর একটি বাগ(বাগান, ফার্সী শব্দ) বা বাগিচা ছিল। এ বাগ শব্দ হতে বাগেরহাট। কাো মতে, নদীর বাঁকে হাট বসতো বিধায় বাঁকেরহাট। বাঁকেরহাট হহতে বাগেরহাট।

২. চুয়াডাঙ্গা জেলাঃ-
চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, এখানকার মল্লিক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মল্লিকের নামে এ জায়গার নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মল্লিক তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি- মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গা নদীপথে এখানে এস প্রথম বসতি গড়েন। ১৭৯৭ সালের এক রেকর্ডে এ জায়গার নাম চুঙ্গোডাঙ্গা উল্লেখ রয়েছে। ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উচ্চারণের বিকৃতির কারণে বর্তমান চুয়াডাঙ্গা নামটা এসেছে। চুয়াডাঙ্গা নামকরণের আরো দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রচলিত আছে। চুয়া < চয়া চুয়াডাঙ্গা হয়েছে।

৩. যশোর জেলাঃ-
১৭৮১ সালে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জেলা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর। যশোর, সমতটের একটা প্রাচীন জনপদ। নামটি অতি পুরানো। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যশোর (জেসিনরে) আরবি শব্দ যার অর্থ সাকো। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীর দেওয়া (১৩৯৮ খৃঃ)। এককালে যশোরের সর্বত্র নদী নালায় পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বে নদী বা খালের উপর সাকো নির্মিত হতো। খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুড়লীতে আগমন করেন বলে জানা যায়। এই বাঁশের সাকো থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। তবে এই মতে সমর্থকদের সংখ্যা খুবই কম। ইরান ও আরব সীমান্তে একটি স্থানের নাম যশোর যার সাথে এই যশোরের কোন সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। খানজাহান আলীর পূর্ব থেকেই এই যশোর নাম ছিল। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রতাপদিত্যের পতনের পর চাঁচড়ার রাজাদের যশোরের রাজা বলা হত। কেননা তারা যশোর রাজ প্রতাপাদিত্যের সম্পত্তির একাংশ পুরস্কার স্বরূপ অর্জন করেছিলেন। এই মতও সঠিক বলে মনে হয়। জে, ওয়েস্টল্যাণ্ড তাঁর যশোর প্রতিবেদনের ১৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের আগে জেলা সদর কসবা মৌজার অর্ন্তভুক্ত ছিল। বনগাঁ-যশোর পিচের রাস্তা ১৮৬৬-১৮৬৮ কালপর্বে তৈরী হয়। যশোর-খুলনা ইতিহাসের ৭৬ পাতায় লেখা আছে “প্রতাপাদিত্যের আগে লিখিত কোন পুস্তকে যশোর লেখা নাই”। সময়ের বিবর্তনে নামের পরিবর্তন স্বাভাবিক।

৪. ঝিনাইদহ জেলাঃ-
প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর-পশ্চিম দিকে নবগঙ্গা নদীর ধারে ঝিনুক কুড়ানো শ্রমিকের বসতি গড়ে ওঠে বলে জানা যায। কলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা ঝিনুকের মুক্তা সঙগ্রহরের জন্য এখানে ঝিনুক কিনতে আসতো। সে সময় ঝিনুক প্রাপ্তির স্থানটিকে ঝিনুকদহ বলা হত। অনেকের মতে ঝিনুককে আঞ্চলিক ভাষায় ঝিনেই বা ঝিনাই বলে। দহ অর্থ বড় জলাশয়, দহ ফার্সী শব্দ যার অর্ত গ্রাম। সেই অর্থে ঝিনুক দহ বলতে ঝিনুকের জলাশয় অথবা ঝিনুকের গ্রাম। ঝিনুক এবং দহ থেকেই ঝিনুকদহ বা ঝিনেইদহ যা রূপান্তরিত হয়ে আজকের এই ঝিনাইদহ।

৫. খুলনা জেলাঃ-
হযরত পীর খানজাহান আলীর (র.) স্মৃতি বিজড়িত ও ভৈরব-রূপসা বিধৌত পৌর শহর খুলনার ইতিহাস নানাভাবে ঐতিহ্য মন্ডিত। খুলনা নামকরণের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানান মত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত মতগুলো হলো : মৌজা ‘কিসমত খুলনা’ খুলনা খুলনা; ধনপতি সাওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুল্লনার নামে নির্মিত ‘খুল্লনেশ্বরী কালী মন্দির’ থেকে খুলনা; ১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ জাহাজের নাবিকদের উদ্ধারকৃত রেকর্ডে লিখিত Culnea শব্দ থেকে খুলনা। ইংরেজ আমলের মানচিত্রে লিখিত Jessore-Culna শব্দ থেকে খুলনা,- কোনটি সত্য তা গবেষকরা নির্ধারণ করবেন।

৬. কুষ্টিয়া জেলাঃ-
কুষ্টিয়া জেলার নামকরণ নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে, কুষ্টিয়ায় এক সময় কোস্টার(পাট) চাষ হতো বলে কোস্ট শব্দ থেকে কুষ্টিয়ার উৎপত্তি। হেমিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ্য করেন যে, স্থানীয় জনগণ একে কুষ্টি বলে ডাকত। কুষ্টি থেকে কুষ্টিয়া নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে ৬ টি থানা নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।

৭. মাগুরা জেলাঃ-
আজকের যেখানে মাগুরা জেলা শহর গড়ে ওঠেছে প্রাচীনকাল থেকেই এর গুরুত্ব অত্যধিক ছিল। কখন থেকে মাগুরা নাম হয়েছে তার সঠিক হিসেব মিলানো কষ্টকর। মাগুরা প্রাচীন আমলের একটি গ্রাম। মাগুরা দু’টি অংশে বিভক্ত ছিল। মহকুমা সদরের পূর্বে মাগুরা ও পশ্চিমে ছিল দরি মাগুরা। দরি শব্দের অর্থ মাদুর বা সতরঞ্জি। দরি মাগুরায় মাদুর তৈরি সম্প্রদায়ের লোক বাস করতো বলে নাম হয়েছিল দরি মাগুরা। ধর্মদাস নামে জনৈক মগ আরাকান খেকে এসে আগুরা শহরের পূর্ভ কোণের সোজাসুজি গড়াই নদীর তীরে খুলুমবাড়ি মৌজা প্রভুতি দখল করে। লোকে তাকে মগ জায়গীর বলে আখ্যায়িত করেছিল। অনেকের মতে মগরা থেকে মাগুরা নামের উৎপত্তি। লোক মুখে শোনা যায় এককালে মাগুরা এলাকায় বড় বিল ছিল সেই বিলে পাওয়া যেতো প্রচুর মাগুর মাছ। এই মাগুর মাছের নাম থেকেও মাগুরা নামের উৎপত্তি হতে পারে। মাগুরা নামের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধে্য মতভেদ রয়েছে। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মাগুরা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।

৮. মেহেরপুর জেলাঃ-
মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পর্যন্ত দুটি অনুমান ভিত্তিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথমটি ইসলাম প্রচারক মরবেশ মেহের আলী নামীয় জনৈক ব্যক্তির নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেহেরপুর রাখা হয়। দ্বিতীয়টি বচনকার মিহির ও তাঁর পুত্রবধু খনা এই শহরে বাস করতেন বলে প্রচলিত আছে। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে তা মেহেরপুর হয়। ১৯৮৪ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর জেলার মর্যাদা লাভ করে।

৯. নড়াইল জেলাঃ-
নড়াইল নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকবিদরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। কিংবদন্তী আছে, নড়িয়াল ফকিরের আশীর্বাদপুষ্ট নড়ি থেকে নড়িয়াল নামের উৎপত্তি। নড়িয়াল ফকিরের আশীর্বাদপুষ্ট তাই নাম হয় নড়িয়াল। পরবর্তীতে লোকমুখে বিকৃত হয়ে নড়িয়াল থেকে নড়াইল।

১০. সাতক্ষীরা জেলাঃ-
সাতক্ষীরা জেলার আদি নাম ছিল সাতঘরিয়া। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কর্মচারী হিসেবে ১৭৭২ সালে নিলামে এই পরগনা কিনে গ্রাম স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র প্রাণনাথ চক্রবর্তী সাতঘর কুলীন ব্রাক্ষ্মণ এনে এই পরগনায় প্রতিষ্ঠিত করেন তা থেকে সাতঘরিয়া নাম হয়।

৫। রাজশাহী বিভাগঃ-

১. বগুড়া জেলাঃ-
১২৮১-১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লরি সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের ২য় পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন বগরা খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তাঁর নামানুসারে বগুড়া জেলার নামকরণ করা হয়েছে।

২. জয়পুরহাট জেলাঃ-
জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

৩. নওগাঁ জেলাঃ-
নওগাঁ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’(নুতুন) ও ‘গাঁ (গ্রাম) শব্দ থেকে শব্দ দুটি ফরাসী। নওগাঁ শব্দের অর্থ হলো নুতুন গ্রাম। ১৯৮৪ সালে ১ মার্চ নওগাঁ ১১ টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৪. নাটোর জেলাঃ-
নাটোর জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নারদ নদী কথিত আছে এই নদীর নাম থেকেই ‘নাটোর’ শব্দটির উৎপত্তি। ভাষা গবেষকদের মতে নাতোর হচ্ছে মুল শব্দ। উচ্চারণগত কারণে নাটোর হয়েছে। নাটোর অঞ্চল নিম্নমুখী হওয়ায় চলাচল করা ছিল প্রায় অসম্ভব। জনপদটির দুর্গমতা বোঝাতে বলা হত নাতোর। নাতোর অর্থ দুর্গম। আরেকটি জনশ্রুতি আছে জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতার আমোদ-প্রমোদের জন্য গড়ে উঠেছিল বাইজিবাড়ি, নটিপাড়া জাতীয় সংস্কৃতি। এই নটি পাড়া থেকে নাটোর শব্দটির উৎপদ্দি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে নাটোর পূর্ণাঙ্গ জেলা লাভ করে।

৫. নবাবগঞ্জ জেলাঃ-
‘চাপাইনবাবগঞ্জ’ নামটি সাম্প্রতিকালের।এই এলাকা ‘নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। চাঁপাইগঞ্জ নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, প্রাক-ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি এবং এর অবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাঁদের পাত্র-মিত্র ও পরিষদ নিয়ে এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামের ইতিবৃত্ত নবাব আমলে মহেশপুর গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারানী বা চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজী বাস করতেন। তাঁর নৃত্যের খ্যাতি আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবের প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠেন। তাঁর নামানুসারে এই জায়গার নাম ‘চাঁপাই”। এ অঞ্চলে রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল। লখিন্দরের রাজধানীর নাম ছিল চম্পক। চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর (১৮৮৫-১৯৬৯ খ্রি) ‘বাঙলা সাহিত্যের কথা’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে বর্ণিত লাউসেনের শত্রুরা জামুতিনগর দিয়ে গৌড়ে প্রবেশ করে। বর্তমান ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া পূর্বে জামুতিনগর নামে পরিচিত ছিল। এসবের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো গবেষক চাঁপাইকে বেহুলার শ্বশুরবাড়ি চম্পকনগর বলে স্থির করেছেন এবং মত দিয়েছেন যে, চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই নামের উৎপত্তি।

৬. পাবনা জেলাঃ–
‘পাবনা’ নামকরণ নিয়ে কিংবদন্তির অন্ত নেই। এক কিংবদন্তি মতে গঙ্গার ‘পাবনী’ নামক পূর্বগামিনী ধারা হতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানা যায় ‘পাবন’ বা ‘পাবনা’ নামের একজন দস্যুর আড্ডাস্থলই এক সময় পাবনা নামে পরিচিতি লাভ করে। অপরদিকে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ‘পাবনা’ নাম এসেছে ‘পদুম্বা’ থেকে। কালক্রমে পদুম্বাই স্বরসঙ্গতি রক্ষা করতে গিয়ে বা শব্দগত অন্য ব্যুৎপত্তি হয়ে পাবনা হয়েছে। ‘পদুম্বা’ জনপদের প্রথম সাক্ষাৎ মিলে খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে পাল নৃপতি রামপালের শাসনকালে।

৭. রাজশাহী জেলাঃ-
এই জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র মতে রাজশাহী রাণী ভবানীর দেয়া নাম। অবশ্য মিঃ গ্রান্ট লিখেছেন যে, রাণী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহী বলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মার উত্তরাঞ্চল বিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। অনুমান করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামের সমন্বয়ে রাজশাহী শহর গ’ড়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে অভিহিত হলেও পরবর্তীতে রাজশাহী নামটিই সর্ব সাধারণের নিকট সমধিক পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে আমরা যে রাজশাহী শহরের সঙ্গে পরিচিত, তার আরম্ভ ১৮২৫ সাল থেকে। রামপুর-বোয়ালিয়া শহরের নামকরণ রাজশাহী কী করে হলো তা নিয়ে বহু মতামত রয়েছে। রাজাশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থবোধক দুটি শব্দের সংযোজন পরিলতি হয়। সংস্কৃত ‘রাজ’ ও ফারসি ‘শাহ’ এর বিশেষণ ‘শাহী’ শব্দযোগে ‘রাজশাহী’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ একই অর্থাৎ রাজা বা রাজা-রাজকীয় বা বা বাদশাহ বা বাদশাহী। তবে বাংলা ভাষায় আমরা একই অর্থের অনেক শব্দ দু-বার উচ্চারণ করে থাকি। যেমন– শাক-সবজি, চালাক-চতুর, ভুল-ভ্রান্তি, ভুল-ত্র“টি, চাষ-আবাদ, জমি-জিরাত, ধার-দেনা, শিক্ষা-দীক্ষা, দীন-দুঃখী, ঘষা-মাজা, মান-সম্মান, দান-খয়রাত, পাহাড়-পর্বত, পাকা-পোক্ত, বিপদ-আপদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনি করে অদ্ভূত ধরনের এই রাজশাহী শব্দের উদ্ভবও যে এভাবে ঘটে থাকতে পারে তা মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই নামকরণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী। কেউ বলেন রাজা গণেশের সময় (১৪১৪-১৪১৮) রাজশাহী নামের উদ্ভব। ১৯৮৪ সালে রাজশাহীর ৪টি মহকুমাকে নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর এবং নবাবগঞ্জ- এই চারটি স্বতন্ত্র জেলায় উন্নীত করা হয়।

৮. সিরাজগঞ্জ জেলাঃ-
বেলকুচি থানায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক এক ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু এটা ততটা প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ক্রমশঃ উত্তর দিকে সরে আসে। সে সময় সিরাজউদ্দীন চৌধুরী ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহল রূপে জমিদারী সেরেস্তায় লিখিত ভুতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি এই স্থানটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান স্থানরূপে বিশেষ সহায়ক মনে করেন। এমন সময় তাঁর নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি পুনঃ নদীভাঙ্গণে বিলীণ হয়। তিনি ভুতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন। ফলে ভুতের দিয়ার মৌজাই ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।

৬। রংপুর বিভাগঃ-
বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক পূণর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (National Implementation Committee for Administrative Reform:NICAR) ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি তারিখে রংপুরকে দেশের সপ্তম বিভাগ হিসেবে অনুমোদন দেয়। এর আগে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই তারিখে মন্ত্রীসভার বৈঠকে রংপুরকে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে একটি কমিটি তৈরি করা হয় এবং কমিটি ২১ জুলাই তারিখে প্রতিবেদন জমা দেয়।

১. দিনাজপুর জেলাঃ-
জনশ্রুতি আছে জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর।

২. গাইবান্ধা জেলাঃ-
গাইবান্ধা নামকরণ সম্পর্কে কিংবদন্তী প্রচলিত আছ, প্রায় পাচ হাজার বছর আগে মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানী ছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগজ থানা এলাকায়। বিরাট রাজার গো-ধনের কোন তুলনা ছিল না। তার গাভীর সংখ্যা ছিল ষাট হাজার। মাঝে মাঝে ডাকাতরা এসে বিরাট রাজার গাভী লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতো। সে জন্য বিরাট রাজা একটি বিশাল পতিত প্রান্তরে গো-শালা স্থাপন করেন। গো-শালাটি সুরক্ষিত এবং গাভীর খাদ্য ও পানির সংস্থান নিশ্চিত করতে। নদী তীরবর্তী ঘেসো জমিতে স্থাপন করা হয়। সেই নির্দিষ্ট স্থানে গাভীগুলোকে বেঁধে রাখা হতো। প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই গাভী বেঁধে রাখার স্থান থেকে এতদঞ্চলের কথ্য ভাষা অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে গাইবাঁধা এবং কালক্রমে তা গাইবান্ধা নামে পরিচিতি লাভ করে।

৩. কুড়িগ্রাম জেলাঃ-
কুড়িগ্রাম জনপদ বেশ প্রাচীন। কুড়িগ্রাম-এর নাম করণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন গণনা সংখ্যা কুড়ি থেকে কুড়িগ্রাম হয়েছে। কারো মতে কুড়িটি কলু পরিবার এর আদি বাসিন্দা ছিল। তাই এর নাম কুড়িগ্রাম। কেউ বা মনে করেন, রংগপুর রাজার অবকাশ যাপনের স্থান ছিল কুড়িগ্রাম। প্রচুর বন-জঙ্গল ও ফল মূলে পরিপূর্ণ ছিল এই এলাকা, তাই ফুলের কুড়ি থেকে এর নাম হয়েছে কুড়িগ্রাম।
১৮০৯ সালে ডাঃ বুকালন হ্যামিলটন তাঁর বিবরণীতে বলেছেন-Kuriganj of which the market place is called Balabari in a place of considerable trade (martins Eastern India)। মিঃ ভাস তাঁর রংপুরের বিবরণীতেও এ অঞ্চলকে কুড়িগঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কুড়িগঞ্জ নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে কেউ কিছুই বলেননি। ১৯৮৪ সালের ২৩ শে জানুয়ারী ‘‘কুড়িগ্রাম’’ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়।

৪. লালমনিরহাট জেলাঃ-
লালমনিরহাট নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে, বৃটিশ সরকারের আমলে বর্তমান লালমনিরহাট শহরের মধ্যে দিয়ে রেলপথ বসানোর সময় উল্লিখিত অঞ্চলের রেল শ্রমিকরা বন-জঙ্গল কাটতে গিয়ে জনৈক ব্যক্তি ’লালমনি’ পেয়েছিলেন। সেই লালমনি থেকেই পর্যায়ক্রমে লালমনিরহাট নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য এক সূত্র থেকে জানা যায়, বিপ্লবী কৃষক নেতা নুরুলদীনের ঘনিষ্ঠ সাথী লালমনি নামে এক ধনাঢ্য মহিলা ছিলেন। যার নামানুসারে লালমনিরহাট নামকরণ করা হয়েছে।
৫. নীলফামারী জেলাঃ-
প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উৎপাদিত মাটির ঊর্বরতার কারণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদঅঞ্চলে। গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেল স্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতন বাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি। ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীল খামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।

৬. পঞ্চগড় জেলাঃ-
“পঞ্চ” (পাঁচ) গড়ের সমাহার “পঞ্চগড়” নামটির অপভ্রমংশ “পঁচাগড়” দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু গোড়াতে এই অঞ্চলের নাম যে, ‘পঞ্চগড়ই’ ছিলো সে ব্যাপারে সন্দেহর কোন অবকাশ নেই। বস্তুত ভারতীয় উপমহাদেশে “পঞ্চ” শব্দটি বিভিন্ন স্থান নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটী, পঞ্চনগরী, পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। “পঞ্চনগরীর” দূরত্ব পঞ্চগড় অঞ্চল থেকে বেশি দূরে নয়। পঞ্চগড় জেলায় বেশ কিছু গড় রয়েছে তাদের মাঝে উল্লেখ করার মত গড় হল ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড়, দেবনগড়। ‘পঞ্চ’ অর্থ পাঁচ, আর ‘গড়’ অর্থ বন বা জঙ্গল। ‘পঞ্চগড়’ নামটি এভাবেই এসেছে।

৭. রংপুর জেলাঃ-
রংপুর নামকরণের ক্ষেত্রে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে এই নামটি এসেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে উপমহাদেশে ইংরেজরা নীলের চাষ শুরু করে। এই অঞ্চলে মাটি উর্বর হবার কারণে এখানে প্রচুর নীলের চাষ হত। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামেই জানত। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর। অপর একটি প্রচলিত ধারনা থেকে জানা যায় যে রংপুর জেলার পূর্বনাম রঙ্গপুর। প্রাগ জ্যোতিস্বর নরের পুত্র ভগদত্তের রঙ্গমহল এর নামকরন থেকে এই রঙ্গপুর নামটি আসে। রংপুর জেলার অপর নাম জঙ্গপুর । ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় কেউ কেউ এই জেলাকে যমপুর বলেও ডাকত। তবে রংপুর জেলা সুদুর অতীত থেকে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাঁটি ছিল। তাই জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম হিসেবে ধরা হয়। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ, পুর অর্থ নগর বা শহর। গ্রাম থেকে আগত মানুষ প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে নিহত হত বা ম্যালেরিয়ায় মারা যেত। তাই সাধারণ মানুষ শহরে আসতে ভয় পেত। সুদুর অতীতে রংপুর জেলা যে রণভূমি ছিল তা সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। ত্রিশের দশকের শেষ ভাগে এ জেলায় কৃষক আন্দোলন যে ভাবে বিকাশ লাভ করে ছিল তার কারণে রংপুরকে লাল রংপুর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

৮. ঠাকুরগাঁও জেলাঃ-
ঠাকুরগাঁও এর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে আর যা পাওয়া গেছে তাহলো, বর্তমানে যেটি জেলা সদর অর্থাৎ যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুই ভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে তারা সেই এলাকায় খুব পরিচিত ছিলেন। সেখানকার লোকজন সেই চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁও বলতে শুরু করে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারী ৫টি থানা নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৭। সিলেট বিভাগঃ-
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগষ্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসাবে মর্যাদা পায়।

১. হবিগঞ্জ জেলাঃ-
সুফি-সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী হযরত সৈয়দ নাসির উদ্দীন (রঃ) এর পূর্ণস্মৃতি বিজড়ি খোয়াই, কারাঙ্গী, বিজনা, রত্না প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন জনপদ। ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হাবীব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসরে হবিগঞ্জ নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ হবিগঞ্জ জেলায় উন্নীত হয়।

২. মেীলভীবাজার জেলাঃ-
হয়রত শাহ মোস্তফা (র:) এর বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মনু নদীর উত্তর তীরে কয়েকটি দোকানঘর স্থাপন করে ভোজ্যসামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন। মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোকসমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি। মৌলভী সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এই অঞ্চলের নাম হয় মৌলভীবাজার। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়।

৩. সুনামগঞ্জ জেলাঃ-
‘সুনামদি’ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ‘সুনামদি’ (সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ) নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরোচিত কৃতিত্বের জন্য সম্রাট কর্তৃক সুনামদিকে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসাবে দান করা হয়। তাঁর দানস্বরূপ প্রাপ্ত ভূমিতে তাঁরই নামে সুনামগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। এভাবে সুনামগঞ্জ নামের ও স্থানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে।

৪. সিলেট জেলাঃ-
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলকে বিভিন্ন নামের উল্লেখ্য আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতি দেবীর কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে ‘শ্রী হস্ত’ হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম “সিরিওট” বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (Ailien) বিবরণে “সিরটে”, এবং পেরিপ্লাস অব দ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম “সিরটে” এবং “সিসটে” এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে। অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম “শিলিচতল” উল্লেখ করেছেন তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাঁদের দলিলপত্রে “শ্রীহট্ট” নামের পরিবর্তে “সিলাহেট”, “সিলহেট” ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তির একটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবং এর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়।

তথ্য সূত্রঃ-জেলা তথ্য বাতায়ন,বাংলা পিডিয়া, উইকিপিডিয়া, যশোর ইনফো, নেত্রকোণার আলো এবং বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment